সেদিন দুজনে

ভালোবাসা / ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৫)

রূপক বিধৌত সাধু
  • 0
  • ১৫
ময়মনসিংহ যাদুঘরে গাইডের চাকরি করে শারমিন । তার বাড়ি হালুয়াঘাট । দু তিন মাস হল, এখানে এসেছে সে । পরিবেশ, লোকজন সবকিছুই তার কাছে নতুন । চেষ্টা করছে সবকিছু মানিয়ে নিতে ।
নিলয় তার সহকর্মী । তার বাড়ি জয়পুরহাট । এক বছর ধরে এখানে আছে সে । নিলয় ছেলেটা চাপা স্বভাবের । তবে বেশ মিশুক । শারমিনের সাথে তার বেশ সখ্য ।
সেদিন শুক্রবার । যাদুঘর বন্দ । যাদুঘরের সামনে ফুলের বাগানে কাজ করছিল নিলয় । শারমিন দাঁড়িয়ে দেখছিল । তার মুখটা বিষণ্ণ । নিলয় তাকিয়ে দেখল ।‘কোন সমস্যা, শারমিন !’ নিলয় জানতে চাইল ।
শারমিন কিছু বললনা । অন্যদিকে তাকিয়ে রইল । নিলয় নিড়ানি রেখে তার সামনে এসে দাঁড়াল । ‘তোমার কি মন খারাপ? তার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল নিলয় । শারমিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল । তারপর বলল, ‘আমার কিছু ভাল লাগছেনা !’
নিলয় বলল, নতুন পরিবেশে এসেছ, তাই হয়ত বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগছে ।
শারমিন বলল, হবে হয়ত ।
নিলয় বলল, কয়েকদিন থাকো, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে । নিজের কাজে যেতে উদ্যত হল সে ।
শারমিন বলল, চলুন, আজ একটু ঘুরে আসি ।
নিলয় বলল, কোথায় ?
শারমিন বলল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ।
নিলয় বলল, এখন অনেক কাজ । যাব কিভাবে !
শারমিন বলল, এখন না, বিকেলে ।
নিলয় বলল, আচ্ছা ।

ব্রীজ হতে একটু দক্ষিনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় । অটো কিংবা রিক্সা দিয়ে যেতে হয় । রিক্সায় উঠল দুজনে । শারমিনের চুল হাওয়ায় উড়ছিল । অনেকদিন পর মুক্ত বিহঙ্গের মত উড়ছে যেন সে । এমন একটা সময় ছিল পলকের সাথে খুব ঘুরত সে । পলক তার স্কুল-কলেজ জীবনের বন্ধু । বন্ধুত্ত একসময় ভালবাসায় রূপ নেয় । পলকের জন্য সব কিছু করতে পারত সে । একবার বাড়ির কাওকে না বলে পলকের সঙ্গে ময়মনসিংহে চলে এসেছিল । সে অনেক দিন আগের কথা । সবে নবম শ্রেণিতে উঠেছে সে ।
একদিন পলক বলল, চল, ঘুরে আসি !
শারমিন জিজ্ঞেস করেছিল, কোথায় ?
পলক বলেছিল, ময়মনসিংহে ।
শারমিন আর কোন কথা না বলেই রাজি হয়ে গিয়েছিল । ভালবাসা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিল । লোকলজ্জা নিয়ে ভাবার অবসর দেয়নি ।
পলকও তাকে অনেক ভালবাসত । পলক তাকে বলেছিল, আমরা একসাথে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকব । তারপর বিয়ে করে একসাথে থাকব । পলক কথা রাখেনি ।
টিকিট কেটে তারা ভুটানিকেল গার্ডেনে ঢুকল । নানান প্রকার বৃক্ষের সমাহার । নিলয় আগে একাদিকবার এখানে এসেছে । শারমিন এই প্রথম । শারমিনকে বেশ প্রফুল্ল মনে হল । অনেকদিন প্রকৃতির সান্নিদ্ধ্য পায়নি সে । বদ্ধ পরিবেশে প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছিল ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কূল ঘেঁষে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ । কয়েকটা নৌকো যাচ্ছে । যুগলেরা পাশাপাশি বসে আছে । নিলয় আর শারমিন এখানে এসে বসল । পূবাল হাওয়া আসছে ।
শারমিন বলল, আপনার কেও নেই ?
নিলয় অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল । এবার শারমিনের দিকে তাকাল । কিছু বলছেন না যে ! শারমিন ফের জিজ্ঞেস করল । মৃদু হাসল নিলয়। বলল, আছে ।
শারমিন জিজ্ঞেস করল, কোথায় ? জয়পুরহাটে না ময়মনসিংহে !
নিলয় কিছু বললনা । চুপচাপ বসে রইল । সাড়া না পেয়ে শারমিন ও চুপ হয়ে গেল ।

রুবেলও যাদুঘরে চাকরি করে । সে শারমিনের পাণিপ্রার্থী । শারমিনের পিছে লেগে থাকে সবসময়; কিন্তু শারমিন তাকে পাত্তা দেয়না । সবসময় এড়িয়ে চলে । তবু হাল ছাড়েনা সে । তার বিশ্বাস, একদিন শারমিন তাকে ভালবাসবে । একদিন দ্বিপ্রহরে বেঞ্চিতে বসে ছিল শারমিন । আজ অতিথি কম । এখন কেও নেই । রুবেল কী কাজে বাইরে গিয়েছিল । সবে কাজ সেরে ফিরল ।
কী ভাবছ, শারমিন ? শারমিনকে জিজ্ঞেস করল রুবেল ।
শারমিন বলল, না, কিছুনা ।
রুবেল বলল, চলো, আজ সিনেমা দেখে আসি ।
শারমিন বলল, এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা । আপনি আপনার কাজে যান তো ।
কথার ভঙ্গিতে বেশ বিরক্তি । রুবেল কথা বাড়ালনা । সে বুঝল, শারমিনের মন ভাল নেই । কথা বাড়ালে কটু কথা শুনতে হবে । এর আগেও একাদিকবার এমনটা ঘটেছে । রাগ হলে যা খুশি তাই বলে মেয়েটা ।

পলকের ফোন । শারমিন একটু উদাস হয়ে ফোনের দিকে তাকাল । বোঝতে পারছেনা- ফোন ধরবে, কী ধরবেনা ! প্রথম ভালো লাগা – তাই সহজে এড়িয়ে যেতে পারেনা । কী তীব্র অনুরাগ ! মনের ক্ষোভ পর্যন্ত ম্লান হয়ে যায় । আচ্ছা করে বকবে-ভেবে নিল শারমিন ।
কেন ফোন দিয়েছ ? কণ্ঠ হতে রাগ ঝরে পড়ছে শারমিনের ।
ভালো আছো তুমি, শারমিন ? স্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল পলক ।
শারমিন বিচলিত হয়ে পড়ল । পুরনো প্রেম উছলে পড়ছে । তবু নিজেকে সামলে নিল ।
আমি আবার তোমাকে পেতে চাই, শারমিন ! কান্না-জড়িত কণ্ঠে বলল পলক ।
কেন ? বৃষ্টি কোথায় ! পরিহাসের স্বরে জিজ্ঞেস করল শারমিন ।
এবার একটু চুপ হয়ে গেল পলক । আর কথা বলল না । ফোন কেটে দিল।

জাদুঘর জিম্মাদার রশিদ চাচার ছেলের বিয়ে । সহকর্মী সকলের দাওয়াত । শারমিন নিলয়কে নিয়ে কেনাকাটা করল । নির্দিষ্ট দিনে সকলেই সেজেগোজে বিয়ে বাড়িতে একত্র হল । শারমিন নিলয় সব সময় পাশাপাশি । রুবেলের হিংসে হল । কী আর করা যাবে । বেচারা নীরব দর্শক ।
শারমিনের পরনে শাড়ি আর নিলয়ের পরনে পায়জামা- পাঞ্জাবী । বেশ লাগছে দুজনকে । নিলয় একটু পরপর শারমিনের দিকে তাকায় ! তার বলতে ইচ্ছে হল, শাড়িতে তোমাকে চমৎকার লাগছে , শারমিন! কিন্তু বলতে পারছেনা ! সে কী জানে, তাকে কতো ভালো লাগছে !
বাড়িতে সাজসাজ রব । তোড়ন বানানো হয়েছে । নানা রঙের মানুষের আগমন । সবাই হইচই করছে । গান গাইছে । সবাই বেশ উৎফুল্ল । গাছে গাছে চুনকাম করা হয়েছে । ফুলে ফুলে পরিপূর্ণ বারান্দা ।
শারমিন নিলয়ের হাত ধরে আছে । নিলয় প্রথমে শিহরিত হয়েছিল, এখন বিস্মিত হচ্ছে । গায়ে গা জড়ানো ।
নিলয়ের লজ্জা লজ্জা লাগছে । অনেকেই তাকিয়ে আছে। কেও কেও তাদের প্রেমিক প্রেমিকা ভাবছে !

একসাথে সকলেই আহার সম্পন্ন করল । এবার বিয়ে পড়ানোর পালা । কাজী সাহেব ইতোঃমধ্যে চলে এসেছেন । সবাই বর কনের পাশে এসে বসল । দোয়া দোরদ শুরু হয়ে গেল । শারমিন এখনও নিলয়ের হাত ধরে আছে ! নিলয় এক দৃষ্টিতে শারমিনের পানে তাকিয়ে রইল ! আহা ! কী রূপ ! আগে তো এত ভালো লাগেনি । এ কী ভেল্কি, না বাস্তব ! শারমিনের চুল ছুঁতে ইচ্ছে হল তার ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু ভালো লাগলো গল্পটি ....
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ এখনেই শেষ ? ভালই তো লাগছিল ! শুভ কামনা রইল ।
ভালো লাগেনি ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
Arif Billah চমৎকার গল্প। ভাল লাগার মত কাহিনী আছে গল্পে। শুভ কামনা রইল।
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
রবিউল ই রুবেন দোয়া দরুদ শুরু হয়ে গেল। ভালোই লাগল।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
মোজাম্মেল কবির চেনা পথে হেটে বেড়ালাম গল্পে। বানানে একটু সতর্কতা আর গল্প বলায় (লেখায়) আরও দক্ষ হতে হবে। নিয়মিত লিখে যাবেন আশা করি। শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫
জুন খুব সুন্দর পরিনতি।শেষটুকু মন কেড়েছে।যে স্থান গুলোর না উল্লেখ করেছেন সবই আমার চেনা।বাস্তবকে স্পর্শ করেছে খুব। ভালো লাগা সাথে ভোট শুভ কামনা হিসেবে। সম্ভব হলে আমার কবিতাটি পড়বেন।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

১৫ জুন - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪